বহু দিনের আগের ঘটনা। তখন দিল্লির বাদশাহ ছিল মহামতি সম্রাট আকবর। কী হিন্দু কী মুসলমান সেই সময়ে ভারতের ধন সম্পদের দিক দিয়েও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ। এমনকি রাজ্য পরিচালনার দিক থেকে ও তিনি খুব পারদর্শিক ছিলেন। সম্রাট আকবর হিন্দু মুসলমান সবাইকে খুব ভালবাসতেন। যে কারণে তিনি হয়তো চেয়েছিলেন দু’জাতির একিত্রকরন। অর্থ্যাৎ Òদিন-ই এলাহী”নামক এক নতুন ধর্ম প্রচারে লিপ্ত হয়েছিলন। রাজ্য শাসন ক্ষমতার দিক দিয়ে তৎকালীন ভারতের রাজপুতানারা ছিলেন খুব প্রভাবশালী ও প্রতাবশালী। এমনকি শক্তি সাহসে ও ওরা ছিলো পরিপূর্ণ। এই রাজপুতানারা কখনো কারো কাছে হার মানতেন না বা পরাজিত হতে চাইতেন না। এমনকি কারো কাছে বৎসতা স্বীকার ও করতেন না। মহাজ্ঞানী মহামতী সম্রাট আকবর একদিন ভাবতে লাগলেন কী করে কেমন করে সেই প্রভাবশালী ও প্রতাবশালী রাজপুতানাদের তার অধীনে আনা যায়। কারণ সম্রাট আকবর খুবই বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সবার আগে মহারাজা মানসিংহকে তার অধীনে আনার। সেই লক্ষ্যে মনের ইচ্ছাকে পূর্ণ করার জন্য সততা ও সুকৌশলে মহামতী আকবর মহারাজা মানসিংহের আপন ফুফুকে বিয়ে করার ইচ্ছায় মানসিংহকে সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি করার প্রস্তাব দিলেন। যাকে বলে একঢিলে দুই পাখি শিকারের মতো। সম্রাট আকবর তার বৃদ্ধিতে সার্থক হলেন। তখন থেকেই রাজা মানসিংহ সম্রাটের প্রধান সেনাপতি তো হলেনই অপরদিকে তার আপন আত্মীয় ও হয়ে গেলেন। তার এই বুদ্ধিদীপ্ততার গুণে পর্যায়ক্রমে একদিন সমগ্র রাজপুতানা সম্রাট আকবরের অধীনে এসে গেলো। এবার সম্রাটের দৃষ্টি নিবন্ধিত হলো বাংলাদেশের উপর। তখন বাংলাদেশ বার ভূইয়া ও ঈসাখাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি বিরাজ করছিলো। একদিকে সম্রাট আকবর বার ভূইয়াকে পরাস্থ করে সমগ্র বাংলাদেশ দিল্লীর সিংহাসনের অধীনে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন। সেই লক্ষ্যে তিনি একদিন সেনাপতি মানসিংহকে সৈন্য সামন্ত সাথে নিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে ছিলেন। তখন যশোরের প্রতাপতিত্ব, বাওয়ালের ফজল গাজী, ফরিদপুরের কন্দ্রপ রায়, বিক্রমপুরের চাঁদ রায়, কেদার রায়, সোনারগাঁয়ের ঈশাখাঁ অর্থ্যাৎ বিশেষ করে তাদের উপর ছিল বাংলার শাসন ক্ষমতা। সেনাপতি মানসিংহ বাংলাদেশে এসেই সর্ব প্রথম বাংলার বার ভূইয়াদের পরাস্থ করে সমস্ত সৈন্য সামন্ত নিয়ে সোনারগাঁয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। এদিকে ক্ষমতাধর, শক্তিধর ঈসাখাঁ সেই সংবাদ পেয়ে সেনাপতি মানসিংহকে বাধাঁ প্রদান করার উদ্দেশ্য সৈন্য নিয়ে শীতলক্ষা নদী পাড় হয়ে ইউসুফগঞ্জ নামক স্থানে এসে উপস্থিত হলে সেখানেই ঈসাখাঁর সৈন্য মানসিংহকে বাধা প্রদান করলেন। প্রথমে উভয়ের মধ্যে আলপ-পিরচয় হলো। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হবে। কেউ কারো কাছে বিনা যুদ্ধে বৎসতা স্বীকার করতে সম্মত হলেন না। তাই উভয়ের স্বগৌরবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে হঠাৎ মানসিংহের হাত থেকে শানিত তরবারি মাটিতে পরে গেল। বীরবল ঈসাখাঁ পরাজিত মানসিংহের বুকে তরবারি তাক করে ঘোষণা দিয়ে বললেন মানসিংহ এখন আপনি আমার কাছে পরাজিত। তাতে তিনি প্রতি উত্তর না করে নীরব রইলেন। তবুও ঈসাখাঁ যুদ্ধ সমাপ্ত করলেন না। তিনি তার সাহস ও বীরত্ব দেখানোর জন্য পরাজিত মানসিংহের হাতে আবার একটি তরবারি তুলে দিয়ে বললেন, আপনার সাথে আমার আরেকবার শক্তি পরীক্ষা হবে এবং আপনি আমাকে আগে আক্রম করবেন। সেনাপতি মানসিংহ ঈসাখাঁর এমন শক্তি ক্ষমতা, উদারতা ও মহানুভবতার পরিচয় পেয়ে অবাক হয়ে উত্তর দিলেন, না না, আর আপনার সাথে যুদ্ধ করবে না। আমি স্বানন্দো আপনার কাছে পরাজয় মেনে নিলাম এবং আপনার সাথে আমার আর যুদ্ধ নয়, হবে বন্ধুত্ব। ঈসাখাঁর সাথে মানসিংহ সন্ধি করে তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করলেন। এ সময় মানসিংহ ঈসাখাঁকে আবার বললেন , বন্ধু আপনাকে আমার সাথে দিল্লীর সম্রাটের দরবারে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে আপনি নিজের মুখ দিয়ে মহামান্য সম্রাট আকবরকে বলবেন যে আপনি আমাকে পরাজিত করেছেন। তখন ঈসাখাঁ মানসিংহকে বললেন, ঠিক আছে তাই হবে বন্ধু। কিন্তু আগে আমার একটি কথা রাখতে হবে। দিল্লী রওয়ানা হওয়ার আগে আমার বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে বেড়াতে যেতে হবে। মানসিংহ ঈসাখাঁর নিমন্ত্রন গ্রহণ করে সোনারগাঁ অভিমুকে রওয়ানা হলেন। তারপর দিল্লীর গিয়ে সম্রাটের সামনে হাজির হয়ে সেনাপতি মানসিংহ ঈসাখাঁর পরিচয় তুলে ধরে তার শক্তি সাহস আর উদারতার কথা প্রকাশ করতে গিয়ে ঘটনাটা খুলে বললেন। ঈসাখাঁর সাথে সম্রাটের আলাপ-পরিচয়ের পর রাজ মেহমানখানায় বিশ্রাম করতে তাদের পাঠিয়ে দিলেন। সম্রাট আকবর মানসিংহকে বললেন, এখন ঈসাখাঁকে তুমি কি করতে চাও তাই করতে পার। এই মহা আদেশ পেয়ে মানসিংহ ঈসাখাঁকে বললেন, বন্ধু আপনি আজ থেকে স্বাধীন ছিলেন স্বাধীনই থাকবেন। আপনাকে দিল্লীর সম্রাটের দরবারে কোন প্রকার কর দিতে হবে না। শুধু আপনার পক্ষ থেকে আড়াইহাজার সৈন্যর রসদ প্রদান করতে হবে। তারপর ঈসাখাঁ দিল্লীর সম্রাটের দরবার থেক বিদায় নিয়ে সোনারগাঁয়ের নিজ রাজধানীতে ফিরে আসলেন। ঈসাখাঁর বাংলাদেশে ফিরে আসার সময় মানসিংহ তার সাথে কিছু রাজকর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ বাংলাদেশে রেখে যাওয়া সর্বমোট আড়াইহাজার সৈন্যের ভরণ পোষণের দায়িত্ব দিয়ে বললেন, আপনি শুধু এই আড়াইহাজার সৈন্যের রসদ দিয়ে দিবেন। দিল্লীর সম্রাট আকবরের নির্দেশ মোতাবেক ঈসাখাঁ সেই আড়াইহাজার সৈন্যের রসদ দিতেন এবং থাকার জন্য তাদেরকে আড়াইহাজারে স্থান করে দেয়া হয়েছিলো বলে সেদিন থেকেই জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছিল আড়াইহাজার।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস