একটা দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি সবচেয়ে প্রধান সম্পদ। ভাষা বলতেই সেই দেশের সাংস্কৃতিক দিকটা কেমন তা প্রকাশ পায়। তেমতি ভাষার দিকটাও প্রকাশিত হয়ে থাকে সেই দেশের সংস্কৃতির মাধ্যমে। ভাষা সংস্কৃতি এই শব্দ’দুটি এক অপরের পরিপুরক বলে গন্য।
আড়াইহাজার উপজেলার ভাষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে বিবেচনা করলে সেই দিক থেকে নগন্য বলা যাবেনা। এই উপজেলাতে অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের জন্মস্থান। একটা দেশের ভাষোকে রক্ষা করতে হলে সেই দেশের জ্ঞানী গুনী ব্যক্তিদের দ্বারাই তা রক্ষা হয়ে থাকে। বিশেষ করে সাংস্কৃতিমনা অর্থাৎকবি সাহিত্যিকদের মাধমেই তা রক্ষা হয়।আমাদের বাংলাদেশের ভাষা রক্ষার্থে ১৯৫২ সালে বাঙ্গালিরা আন্দোলন সংগ্রাম করতে দিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিলো। আর সেই ভাষা বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারে একমাত্র কবি সাহিত্যিকেরাই।তাই বলতে হয় ভাষা সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যপ্রায় একই কর্মকান্ড লালন পালন করে।
এখন সগৌরবেই বলতে হয় দেশের সাংস্কৃতিমনা মননশীল,সৃষ্টিশীল,প্রতিভাবান মানুষেরাই ভাষা কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রক্ষা করে। এখানে উল্লেখ করতে হয় ১৯৫২র ভাষা আন্দোলনেও আড়াইহাজার উপজেলা থেকে যিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তিনি হলেন ডাঃ সাদত আলী সিকদার। পরবর্তীতে তিনি আড়াইহাজার উপজেলার দু’বারই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছিলেন বলে তাকে ভাষা সৈনিক বলা হয়ে থাকে।তবে এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় ভাষা সংস্কৃতি রক্ষার্থে আড়াইহাজারের কিছু লেখক কবি সাহিত্যিকদের অবদানের কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা। যাদের চেষ্টা প্রচেষ্টা প্রতিভায় এবং সাধনায় বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করেছে সেই সব স্বনামধন্য ব্যক্তিদের হলেন কবি বেনজীর আহম্মদ। তিনি হাইজাদী ইউনিয়নের ইলমদী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের পর যার মধ্যে বিদ্রোহের ভাব প্রকাশ পেয়েছিলে তিনি হলেন সেই কবি বেনজীর আহম্মদ। তার লিখিত “বন্দীর বাঁশী ও বৈশাখী”কাব্যগ্রন্থবিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।১৯৭৯সালে বাংলাদেশ সরকার সাহিত্য ক্ষেত্রে তাঁকে ‘একুশ পদক’এ সম্মানিত করেন।এই আপোষহীন নির্ভিক সৈনিক এর জন্ম ১৯৩০সালের ২৯ শে অক্টোরব। তিনি ইন্তেকাল করেন ১৯৮৩ সালের ১২ ই ফেব্রুয়ারী। তৎপরবর্তী কবি,প্রাবন্ধিক,উপন্যাসিক, শিশু সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন মোঃ জামালউদ্দিন মোল্লা তিনিও হাইজাদী ইউনিয়নের ইলমদী গ্রামে। তিনি ১৯৩১ সালে ১লা মার্চ জন্মগ্রহন করেন। ২০০০ সালের ১৩ মে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। সেই সময়কার আর এক সনামধন্য ব্যক্তি ছিলেন অতীন বন্ধোপ্যাধ্যায়। তার জন্ম আড়াইহাজার থানার রাইনাদী গ্রামে ১৯৩৪ সালে। গল্পকার হিসেবে তিনি সমুদ্র মানুষ লিখে মানিক পুরষ্কার, শিশির পুরস্কার ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার পান।
এরপর অর্থাৎবর্তমানে যারা লেখালেখিতে নিয়োজিত আছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক সিকদার আরাফাত। তিনি ১৯৪৮ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারী গোপালদী পৌরসভাধীন রামচন্দ্রদী গ্রামের জন্মগ্রহন করেন। ১৯৬২ সালে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েই তার লেখালেখীর কাজটা শুরু হয়। এ পর্যন্ত তার লেখা ২২ টি গ্রন্হ প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে গল্প, উপন্যাস,মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস সহ ৪টি শিশুতোষ গ্রন্থবিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।তিনি ঢাকা দক্ষিন পূর্বাঞ্চলীয় প্রেস ক্লাব এর ২০০৯ সাল এর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক পুরস্কার পেয়েছেন এবং ২০১১ সালে আড়াইহাজার উপজেল শেষ্ঠ সাহিত্যিক পুরস্কারেও ভুষিত হন।
ফজলুল কাশেম: তিনি১৯৫৩ সালে ১১ মে মানেহর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ফিলেন্স সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি একজন দক্ষ গল্পকার হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি কয়েকটি সাহিত্য পুরস্কারেও ভুষিত হয়েছেন।
অনুপম হায়াৎ: তিনি সাংবাদিক জগৎএ বিশেষ এক অবিশ্বরণীয় নাম। তিরি ১৯৫০ সালে ১লা জুন উজান গোবিন্দী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। সাংবাদিক হিসেবে তিনি বাচসাচ এর এস এম পারভেজ স্মৃতি পদক,কবি জসিমউদ্দীন সাহিত্য স্মৃতি পদক,টেলিভিশন রিপোটার্স এসোসিয়েশন পদক,প্রভৃতি পুরস্কার লাভ করেন।
সাহিদা বেগম: সাহিত্য জগৎ এ একজন সুপরিচিত ব্যক্তি। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নয়মাস আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং আরও অনেক গ্রন্হের প্রনেতা তিনিই হলেন সাহিদা বেগম। তিনি ১৯৫৫ সালে ১লা জুলাই বিনাইরচর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন সহকারী এটর্ণী জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রুহুল আমি বাবুল: ১৯৪৫ সালে ২৬ শে এপ্রিল দিঘলদী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ছড়া কবিতা লিখে সুনাম অর্জন করেছেন। তবে ইনি অনেক গল্পও লিখেছেন এবং কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদনাও করেছেন। আরও যারা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে মুন্সী হাবিবুল্লা, মোফাজ্জল সামস এর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস